ভূমিকা: কোন দেশ বা ব্লকের বা তাদের একচটিয়া ব্যবসায়ী বা শিল্পসংঘ সমুহের কর্তৃত্ব বা বিশেষ অধিকার নাকচ করে সকল দেশের সঙ্গে সমান শর্তে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার নীতি।
মুক্তদ্বার নীতি কথাটি ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত। কোন শিল্প ও কৃষিতে উন্নত দেশ বা দেশগুলো যখন অন্য দেশ বা দেশগুলোতে পণ্য সামগ্রী সরকার কর্তৃক কোন শুল্ক বা বাধাঁ ছাড়াই অবাধে বাজারে প্রবেশ করতে পারে তাকে মুক্তদ্বার নীতি বলে।
চীনে মুক্তদ্বার নীতি: সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য দেশগুলো যথা বৃটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানী, রাশিয়া এ পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করে শাসন ও শোষনের জন্য।
তাদের শোষণের আরেকটি ক্ষেত্র বা দেশ হলো চীন। এখানে তারা বেশি দিন সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারেনি। তবে শোষণ করেছে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তদ্বার নীতিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে।
মুক্তদ্বার নীতির প্রেক্ষাপট: পাশ্চাত্য শক্তিগুলো জানত বিশাল চীনকে বেশি দিন দখল করে রাখা সম্ভব নয় এবং তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যেতে হবে। তাই তারা সমগ্র চীনে নিজেদের পন্য-বাজারে বিস্তার করতে চেয়েছিল এবং চীনকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করতে চেয়েছিল। ঐতিহাসিক জ্যাঁ শ্যোনো মুক্তদ্বার নীতিকে বলেন “চীনে বিদেশীদের যৌথ কর্তৃত্বের পারস্পারিক নিশ্চয়তা”। ঐতিহাসিকরা মনে করেন মুক্তদ্বারনীতির মূল উদ্ভাবক গ্রেট ব্রিটেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হে-ডকট্রিন এর মাধ্যমে এ নীতি কার্যকর করেছিল মাত্র। তখন বিভিন্ন পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ চীনের এলাকা দখল করে চীনকে বিভাজন করেছিল। যেমন ফরাসী শক্তি কোয়াংসি অঞ্চলে, বৃটিন ইয়াংসি অববাহিকায়, রাশিয়া মাঞ্চুরিয়ায় এবং জাপান ফোকিয়েন অঞ্চলে স্ব স্ব প্রভাব বিস্তার করে।
প্রচেষ্টা:
১) বৃটেনের পক্ষ থেকে: বৃটেনের প্রথম থেকেই আশঙ্কা ছিল যে, ঔপনিবেশিক বিভাজন সম্পন্ন হলে চীনের সর্বত্র সে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। সব থেকে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বৃটেন স্বাভাবিকভাবেই চেয়েছিল শিল্পজাত পন্যের বাজারে সমানাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে লিপ্ত হতে। কিন্তু অন্যান্য বিদেশী শক্তির “প্রভাবাধীন অঞ্চলে” এ ধরণের প্রতিযোগিতা সম্ভব না। তাই চীনে বিভিন্ন শক্তির “প্রভাবাধীন অঞ্চলে” বিভাজিত হোক তা বৃটেন কখনই চায় নি। কারণ সে জানত তা হবে তার বাণিজ্যিক স্বার্থের পরিপন্থি।
২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা চীনের কোন ভূখণ্ড দখল করা নয়।
বৃটেন মনে করত- রাশিয়ার আগ্রাসী নীতি ব্রিটেনকে সবথেকে বেশি আতঙ্কিত করবে। মাঞ্চুরিয়াতে রুশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবার আশাঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া চীনের প্রতিবেশি হবার সুবাদে রাশিয়ার কতকগুলি সুবিধা ভোগ করত। তাই ব্রিটেন চেয়েছিল চীনে যেন বিভিন্ন শক্তির প্রভাবাধীন অঞ্চল গড়ে না ওঠে। আর যদি এ ধরণের গড়েও ওঠে তবে সমস্ত বিদেশী রাষ্ট্রই যেন ষেখানে বাণিজ্য করার সমান অধিকার লাভ করে।
১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে ও ১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ব্রিটেন এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যৌথ প্রচেষ্টার প্রস্তাব দেয়। পিকিং এ নিযুক্ত মার্কিন মন্ত্রী চালর্স ডেনীব এবং গ্রেট ব্রিটেনের মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হে এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। জন হে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে এ নীতিতে দুইজন ব্যাক্তির অবদান আছে।
(১) হিপিসিলি- হিপিসিলি নামে চীনের শুল্ক বিভাগের এক উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারী এ বিষয়ে জন হে-কে প্রভাবিত করেছিলেন। হিপিসিলির বক্তব্য ছিল বিভিন্ন শক্তিবর্গের “প্রভাবাধীন অঞ্চলে” সংশ্লিষ্ট শক্তিগুলি যদি মুলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ সুবিধা পায় তাতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু বাণিজ্য সমানাধিকার বিঘিœত হলে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিদেশী বণিকদের ক্ষেত্রে শুল্কহারে কোন বৈষম্য অবলম্বন করা চলবে না।
(২) রকহিল- রকহিল নামক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে এক প্রবীণ অফিসার ছিলেন, যিনি চীন, তিব্বত ও মোঙ্গলিয়ায় দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন। জন হে হিপসিলির চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে রকহিলকে একটি স্মারকপত্র রচনা করার নির্দেশ দেন। এই স্মারকপত্রই “ঐধু উড়পঃৎরহব” নামে বিখ্যাত। এই স্মারকপত্রে আমেরিকার রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাব করে।
হে-র স্মারকপত্রে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলি রাখা হয়েছিলঃ
১. প্রভাবাধীন অঞ্চলের স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় বিদেশী হস্তক্ষেপ চলবে না।
২. চীনের উন্মুক্ত বন্দরগুলিকে চীনের শুল্ক-বিভাগ অনুযায়ী কর আদায় করবে এবং এ বিষয়ে কোন বিদেশী হস্তক্ষেপ থাকবে না।
৩. নিজ নিজ প্রভাবাধীন অঞ্চলে কোন বিদেশী শক্তি অন্য কোন দেশের বাণিজ্যিক পণ্যের উপর বৈষম্যমূলক শুল্ক চাপাবে না।
১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাসে হে তার দ্বিতীয় স্মারকপত্র প্রকাশ করেন। এখানে বাণিজ্যিক সমানাধিকার ছাড়াও চীনের আঞ্চলিক অখন্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল চীনের শাসনতান্ত্রিক সংহতি রক্ষা করা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত কাম্য। উল্লেখ্য, বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।
সমালোচনাঃ
অনেকেই মনে করেন যে উনবিশংশ শতকের শেষের দিকে চীন যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল এবং বৃহৎ শক্তিবর্গের দ্বারা চীন ব্যবচ্ছেদ আসন্ন হয়ে উঠেছিল। সেই সময় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সময়োচিত হস্তক্ষেপের ফলে “মুক্ত দ্বারনীতির মাধ্যমে চীনের আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক জ্যা শ্যোনে এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, হে-র স্মারকপত্রে চীন থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশে ভাগ বসানোর তাগিদেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করেছিল। আমেরিকার ঐতিহাসিক ওয়েন ল্যাটিমোর (ঙবিহ খধঃঃরসড়ৎব) রসিকতা করে “মুক্ত দ্বারনীতি” কে “আমিও নীতি” (গব ঃড়ড় ঢ়ড়ষরপু) বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইভ্রায়েণ এপস্টেইন বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্রের সরকার উপলব্ধি করেছিল যে, “মুক্ত দ্বারনীতি” গৃহীত হলে আমেরিকার বণিকরা সমগ্র চীন জুড়ে বাণিজ্য চালানোর ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে না। চীন নিজে মুক্ত দ্বারনীতি চায় কিনা এ বিষয়ে কিন্তু চীনের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় নি। যেহেতু সেই সময় কোন শক্তির পক্ষেই এককভাবে সমগ্র চীন সাম্রাজ্য দখল করে নেওয়া সম্ভব ছিল না এবং প্রত্যেকটি শক্তিই একে অপরের দ্বারা চীন থেকে উচ্ছেদ হওয়ার আশাঙ্কায় আশাঙ্কিত ছিল, তাই “মুক্ত দ্বারনীতি” মেনে নেওয়ার বিষয়ে কেউ বিশেষ আপত্তি দেখায় নি।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলা যায় বৃহৎ শক্তিবর্গ বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন চীনের যাবতীয় প্রভাবাধীন অঞ্চল এবং ইজারা স্বত্বাধীন এলাকা সকলে জন্য সকলের জন্য সমানভাবে উম্মুক্ত রাখতে চেয়েছিল। জ্যাঁ শ্যোনোকে অনুসরণ করে বলা যেতে পারে যে, “মুক্ত দ্বারনীতি” ছিল চীনে বিদেশীদের যৌথ কর্তৃত্বের পারস্পারিক নিশ্চয়তা। “ঙঢ়বহ উড়ড়ৎ চড়ষরপু” ডধং ঈৎবধঃবফ নু ঈধঢ়রঃধষরংঃ ঈড়ঁহঃৎরবং ভড়ৎ বপড়হড়সরপ রহ ঈযরহধ.
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম । অনেক ধন্যবাদ ।
৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এ ১২:০১ AM
Amit Khanna photography Om organic photography
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এ ৯:৫২ AM
মুক্তদ্বার নীতি কে প্রবক্তা করেন?
২৮ জানুয়ারী, ২০১৯ এ ১০:০০ PM
উইলিউইলি
৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ এ ১০:২১ PM
ঔঔঠকপব
৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ এ ১০:২২ PM
জন হে
২ জুন, ২০২০ এ ৪:৩০ AM