Blogger Templates by Blogcrowds

সীমান্ত সংকট

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪


দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর অন্যতম একটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল। এখানকার সংঘাতের পেছনে বিভিন্ন উপাদান কাজ করছে। তবে প্রত্যেকটি সংঘাতের পেছনেই অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, দারিদ্রতা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অন্যতম একটি সমস্যা হল সীমান্ত সমস্যা। ব্রিটিশদের অপরিণামদর্শী সীমান্ত বিভাজনই দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্ত সংকটের প্রধান কারণ।
এ সীমান্ত সমস্যার কারণেই মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রভাবশালী রাষ্ট্র ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মাঝে চরম বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির জন্য আন্তঃবাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পৃথিবীতে তারা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে। সীমান্ত সমস্যাকে কেন্দ্র করে এখানকার দেশগুলো করছে অস্ত্রীকরণ। সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অস্ত্রবাজি আরো বেড়ে যেতে পারে। আর অস্ত্রবাজি শুধু এ অঞ্চলকে সংঘাতপূর্ণই করে তুলবে, শান্তির পাথেয়কে আরো দুরে ঠেলে দিবে। তাই এ অঞ্চলের সংহতি বৃদ্ধিতে সীমান্ত সংকটের কৃচ্ছসাধনের বিকল্প নেই।
এই প্রতিবেদনটিতে দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্ত সংকটের প্রেক্ষাপট, সীমান্ত সংকটের কারণ, সীমান্ত সংকটের প্রভাব সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত সমস্যা; ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সীমান্ত সংকট; পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত বিরোধ; ভারতের সাথে নেপালের কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিরোধ প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এ অঞ্চলের সীমান্ত বিভাজন রেখাগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়াও সমুদ্রসীমা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যে বিরোধ রয়েছে সে বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষে, দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্ত সমস্যা সমাধানের উপায়, সীমান্ত সংকটে বহিঃশক্তির প্রভাব, সীমান্ত সমস্যা কিভাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, সীমান্ত সংকটকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের দেশগুলো কিভাবে অস্ত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একটি সামগ্রিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রতিবেদনের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।
একনজরে সীমানা চিহ্নিত রেখাঃ
সংশ্লিষ্ট দেশ
সীমান্তের নাম
বাংলাদেশ-ভারত
র‌্যাডক্লিফ লাইন
ভারত-পাকিস্তান
র‌্যাডক্লিফ লাইন, লাইন অব কন্ট্রোল (কাশ্মীর)
ভারত-চীন
ম্যাকমোহন লাইন, লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল
পাকিস্তান- আফগানিস্তান
ডুরাল্ড লাইন
ভারত-নেপাল
কালাপানি (সীমান্তবর্তী স্থান)


দক্ষিণ এশিয়ায় সীমান্ত সমস্যার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ



দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানকার দেশগুলো একসময় অর্থনীতিতে প্রভাবশালী বলে বিবেচিত হত। তাছাড়া ভূ-কৌশলগত কারণেও অন্যান্য অঞ্চলের দেশগুলোর কাছে এ অঞ্চলের দেশগুলো গুরুত্ব পেয়েছিল। তাই অতীতে উপনিবেশিক শক্তিগুলো এখানে আসতে থাকে। সর্বশেষ, ব্রিটিশরা এখানে স্থায়ী উপনিবেশিক শাসন স্থাপন করে। তারা ভারতীয় উপমহাদেশে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলের মানুষ প্রচন্ড উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। ফলে তারা দেশগুলোকে স্বাধীন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। খুব দ্রুত সময়ে সীমান্ত কমিশন গঠন করে ব্রিটিশরা তাদের ইচ্ছামত এ অঞ্চলের দেশগুলোকে বিভক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করে। সর্বশেষ, র‌্যাডক্লিফ লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশকে বিভক্ত করে তারা এ অঞ্চলে তাদের উপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটায়। কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের ইচ্ছামত দেশগুলোর সীমান্ত বিভক্ত করলেও পরবর্তীতে অনেক দেশই এ সীমান্ত বিভাজন মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলস্বরূপ দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো সীমান্ত সংকট লেগেই আছে।
প্রত্যক্ষ কারণ
হৃ ব্রিটিশদের অদুরদর্শী সীমান্ত বিভাজন
হৃ ব্রিটিশ কর্তৃক কাশ্মীরের স্থায়ী সমাধান করা
হৃ চীন ও ভারতের তিক্ততার সম্পর্ক
হৃ পাকিস্তান ও ভারতের বৈরী সম্পর্ক
হৃ বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া স্থায়ী সীমান্ত চুক্তি কার্যকর না হওয়া
হৃ ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব


দক্ষিণ এশিয়ায় সীমান্ত সমস্যার কারণঃ


পরোক্ষ কারণ
হৃ অবৈধ চোরাচালান
হৃ মানব পাচার
হৃ  অবৈধ মাদক দ্রব্য চোরাচালান
হৃ সীমান্তে হত্যা
হৃ সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ
হৃ  সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা

                                   










                        একনজরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিচিতি এবং সীমান্ত সমস্যাঃ


বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত সমস্যাঃ

বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার ২৪২৯ মাইল সীমান্ত এলাকা রয়েছে। বাংলাদেশের ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে ইন্ডিয়ার পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশই সীমান্তে অনেকগুলো পিলার স্থাপন করেছে সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য।
বাংলাদেশের বর্তমান যে সীমানা তা প্রথমে ব্রিটিশদের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি গঠনের মাধ্যমে আসে। ১৯৪৭ সালে ভারত যখন ব্রিটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা পায় তখন মুসলিম এবং অমুসলিম মেজোরিটির ভিত্তিতে এ অঞ্চলকে বিভক্ত করা হয়। পাঞ্জাব, বেঙ্গল এবং আসামের সিলেট জেলাকে এভাবে বিভক্ত করা হয়। মুসলমানরা ইন্ডিয়ার পশ্চিমে এবং বাংলা প্রদেশের পূর্বদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এই দুই এলাকাকে নিয়ে পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেলে নতুনভাবে সীমান্ত নির্ধারিত হয়।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সীমান্ত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিসমূহঃ
চুক্তি-প্রটোকল সমঝোতা স্মারক
স্বাক্ষরের তারিখ
মেয়াদ
মৈত্রী, শান্তি এবং সহযোগিতা চুক্তি
১৯ই মাচ, ১৯৭২
২৫ বছর
অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট এবং বাণিজ্য প্রটোকল
১৯ নভেম্বর,১৯৭২। নবায়ন-২৮মার্চ,২০০৯

ভূমি সীমানা চিহ্নিতকরণ (মুজিব-ইন্দিরা) চুক্তি
১৬ই মে, ১৯৭৪
অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
তিনবিঘা করিডোর ব্যবহার চুক্তি
২৫ মার্চ, ১৯৯২

গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি
১২ই ডিসেম্বর, ১৯৯৬
৩০ বছর
অবৈধ মাদকদ্রব্য পরিবহন প্রতিরোধ চুক্তি
২১ শে মার্চ, ২০০৬
অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।

দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে সমস্যাঃ
১৯৭০ সালের জলোচ্ছাসের পর হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ জেগে ওঠে। এরপর থেকেই এ দ্বীপটির মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ভারত এই দ্বীপকে নিজেদের বলে দাবি করে এবং ১৯৭৫ সালে দ্বীপটিতে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯৮১ সালে সেখানে ভারত নৌবাহিনী প্রেরণ করে। কিন্তু বরাবরই বাংলাদেশও এই দ্বীপটির মালিকানা দাবি করে আসছে এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রেরণকে অবৈধ বলে মন্তব্য করে। অবশ্য অতি সাম্প্রতিককালে তালপট্টি দ্বীপটি আবার সমুদ্র গর্ভে বিলিন হয়ে গিয়েছে।


ছিটমহল সমস্যাঃ
বাংলাদেশ- ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গত কয়েক দশক ধরেই অন্যতম আলোচনা ও বিরোধের বিষয় হয়ে আছে রাষ্ট্রীয় ভৌগোলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু ভূখন্ড। উভয় দেশেরই মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এসব জনপদের পরিচিতি ছিটমহল নামে। আর এই ছিটমহল মানে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের আর বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ভূখন্ড। তবে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যেও আবার বাংলাদেশের ভূখন্ড রয়েছে। বস্তুত ভারত ভাগের প্রাক্কালে ১৯৪৭ সালে প্রণীত এক ব্রিটিশ আইন এ ধরনের ছিটমহল জন্মের প্রেক্ষাপট রচনা করে। ওই আইনে বলা হয়, উপমহাদেশের স্বাধীন অঞ্চলগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে অথবা চাইলে স্বাধীন সত্ত্বা নিয়েও থাকতে পারবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালের ১ মে উভয় দেশের স্থল সীমানা চিহ্নিতকরণ বিষয়ক এক চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ওই চুক্তিতে উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত ছিটমহল বিনিময়ের তাগিদ দেওয়া হয়। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে ওই চুক্তিতে আরো বলা হয়, দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ দিকের অর্ধাংশ ও পাশ্ববর্তী ছিটমহলগুলো পাবে ভারত। বিনিময়ে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহলের অধিকারি হবে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের পানবাড়ী মৌজার সঙ্গে দহগ্রামকে সংযুক্ত করতে তিন বিঘা নামে ১৭৮ দশমিক ৮৫ মিটার এলাকা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেবে ভারত। এ চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে বেরুবাড়ী দিয়ে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত এ শর্ত বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশকে তিন বিঘা ব্যবহারের অনুমতি দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও এর মধ্যে আরো একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯২ সালের ২৬ জুন তিন বিঘা করিডোর ব্যবহারের শর্তযুক্ত অনুমতি দেয় ভারত। এতে ছিটমহলের বাসিন্দাদের সকাল ৬ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত এক ঘন্টা পরপর ওই করিডোর দিয়ে চলাচলের সীমিত সুযোগ তৈরী হয়। অনেক দেনদরবার করার পর ২০০১ সালের ১১ মার্চ থেকে শুধু দিনের বেলা কোন বিরতি ছাড়াই ১২ ঘন্টা তিন বিঘা করিডোর দিয়ে চলাচলের অনুমতি মেলে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ছিটমহল সমস্যা সমাধানে উদ্দ্যোগী হয় আওয়ামীলীগ সরকারও। তবে কাজ হয়নি তাতেও। দিল্লিতে ২০০০ সালে ডিসেম্বরে দু’দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যৌথ সীমানা ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ পর্যন্ত গোটা চারেক বৈঠক করে ১৯৭৪ সালের চুক্তির আলোকে সীমান্ত সমস্যা সুরাহার সিদ্ধান্ত নেয় উভয়পক্ষ। ছিটমহল এবং অপদখলীয় জমিগুলোতে ২০০৭ সালে যৌথ সফরের পর ধাপে ধাপে বিষয়গুলো সুরাহার প্রস্তাব তোলে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ধাপে ধাপে নয়, সমন্বিভাবে বিষয়গুলো সমাধান করতে চায় তারা। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ দু’দিনের বাংলাদেশ সফরে এসে ৬ সেপ্টেম্বর তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ঘোষণা দেন। কিন্তু এতেও সমাধান হয়না ছিটমহল সমস্যার। তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ঘোষণা দিলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সব ছিটমহল নিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে ব্যর্থ হন। তাই বাংলাদেশে মনমোহনের সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিন ৭ সেপ্টেম্বর থেকেই নতুন করে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ শুরু হয় ছিটমহলগুলোতে। বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারাই নানা কর্মসূচী পালন শুরু করেন। এমনকি টানা দু’রাত বাতি নিভিয়ে রেখে অভিনব প্রতিবাদ জানায় উভয় দেশের ছিটমহলের মানুষ। সাড়ে ছ’দশক অপেক্ষা করেও স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিকের জীবন-যাপনের স্বপ্ন যেন লুকোচুরি খেলছে তাদের সাথে। ওই তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ১৬২ ছিটমহলের আয়তন দাঁড়ায় ২৪ হাজার ২৬৮ দশমিক ০৭ একর। ওই তালিকা থেকে আরো জানা যায়, ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহল রয়েছে ৫১টি। এগুলোর আয়তন ৭ হাজার ১১০ দশমিক ০২ একর। অপরদিকে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ০২ একর।
          ভারত
               বাংলাদেশ
জেলা

বাংলাদেশী ছিটমহল

জেলা
ভারতীয় ছিটমহল
কুচবিহার

৪৭টি

লালমনিরহাট
৫৯টি
পঞ্চগড়
৩৬টি
জলপাইগুড়ি



৪টি

কুড়িগ্রাম
১২টি
নীলফামারি
 ৪টি
মোট

৫১টি


১১১টি
সাম্প্রতিক জনগণনা অনুযায়ী, ভারতী ছিটমহলের লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার। আর বাংলাদেশের ছিটমহলে বাস করে ১৪ হাজার মানুষ। ভারতীয় ছিটমহলগুলোর অধিকাংশই রয়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এ সবের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯, পঞ্চগড়ে ৩৬, কুড়িগ্রামে ১২ ও নীলফামারিতে ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এর মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার ও চারটি জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত।
সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যাঃ
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে অন্যতম একটি ইস্যু হল সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা, অপহরণ, পুশইনের মত মানবাধিকার লঙ্ঘণ কিছুতেই থামছেনা।  ৪ জানুয়ারি, ২০১২ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা গ্লোবাল পোষ্ট দইধহমষধফবংয-ওহফরধ ইড়ৎফবৎ: ডধষষ ড়ভ উবধঃয’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে এ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও রক্তঝড়ানো বেড়া হিসেবে উল্লেখ করে।  মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এর রেকর্ড অনুযায়ী ২০০০ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৯২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। একই সময়ে বিএসএফ এর হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছে ৯৮৭ জন। অপহরণের স্বীকার হয়েছেন অন্তত ১০০০জন। নিখোঁজ হয়েছেন ২০০ এবং পুশইনের শিকার হয়েছেন ৩০০ জনেরও বেশি। এর মধ্যে ২০১১ সালের ৭ই জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলায় ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক কিশোরী ফেলানির হত্যাকান্ডটি আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ২০০৭-২০১১ সালে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যাযজ্ঞের একটি সারণি নি¤েœ দেয়া হলঃ



বিএসএফ এর হত্যাকান্ডঃ
সাল
নিহতের সংখ্যা
২০০৭
১২০ জন
২০০৮
৬২ জন
২০০৯
৯৮ জন
২০১০
৭৪ জন
২০১১
৩১ জন
ভারত ও পাকিস্তান সীমান্ত সমস্যাঃ
সূত্র: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, মার্চ ২০১২।

র‌্যাডক্লিফ লাইনঃ
১৯৪৭ সালের ১৫ই জুলাই তারিখে ব্রিটিশ সংসদে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাস হয়। এখানে বলা হয়েছে আগামী এক মাসের মধ্যে ব্রিটিশরাজ্য ভারতকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি করা হবে। এর প্রেক্ষিতে স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফের নেতৃত্বে সীমান্ত কমিশন গঠন করা হয়।
র‌্যাডক্লিফ লাইন হল ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মধ্যে সীমানা চিহ্নিত রেখা। এটি ১৯৪৭ সালের ১৭ই আগষ্ট ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন বর্ডার কমিশনের চেয়ারম্যান স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফের নামানুসারে এই লাইনের নামকরণ করা হয়। এর মাধ্যমে ৪৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা বিভক্ত করা হয় এবং ৮৮ মিলিয়ন জনগণ এর মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে নিয়ে ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে নিয়ে পাকিস্তান গঠনের কথা বলা হয়।
সূত্রঃ র‌্যাডক্লিফ লাইনঃ উইকিপিডিয়া হতে সংগৃহীত।
মূলত ব্রিটিশ রাজ্যের উত্তরাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলোকে নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে। বেলুচিস্তান এবং সিন্ধু পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। যাহোক, বাংলা এবং পাঞ্জাবে হিন্দু ও মুসলিম কারোই প্রাধান্য ছিল না। বাংলার উত্তর-পূর্বাংশে মুসলিম ছিল ৫৪.৪% এবং পাঞ্জাবের উত্তর-পশ্চিমাংশে মুসলমান ছিল ৫৫.৭%। পাঞ্জাবের পশ্চিমাংশ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং পূর্বাংশ ইন্ডিয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়। পরবর্তীতে এটাকে ক্ষুদ্র পাঞ্জাব রাষ্ট্র এবং আরো দুটি রাজ্যে বিভক্ত করা হয়। তৎকালীন বাংলাকেও বিভক্ত করা হয়। পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের এবং পশ্চিম বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
নদীয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ (৬১% মুসলমান) হওয়া সত্ত্বের এর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পশ্চিম বাংলাকে দেয়া হয়। সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদ জেলা (৫৬.৬% মুসলমান) পশ্চিম বাংলায় যায়, মালদহ জেলার (৫৭% মুসলমান), নওয়াবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, নাছোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট এই পাচঁটি থানা পূর্ব বাংলায় দেয়া হয়। যশোর জেলার বনগাঁও (৫৩% মুসলমান) ও নৌহাটা পশ্চিম বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়। খুলনা (৪৯.৩৬% মুসলমান) পূর্ব বাংলাকে দেয়া হয়। মুসলমান অধ্যুষিত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া প্রভৃতি এলাকা ভারত কে প্রদানের ক্ষতিপূরণ স্বরুপ পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব বাংলাকে দেয়া হয়। সিলেট জেলার একটি বড় অংশ গণভোটের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা পায়। বাংলার সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নবগঠিত পূর্ব বাংলা অবিভক্ত বাংলার মূল ৬৩.৮% এলাকা এবং জনসংখ্যার ৬৪.৮৬% লাভ করে।
কাশ্মীর ইস্যুঃ
ভারতীয় উপ-মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমের একটি অঞ্চল হলো কাশ্মীর। এর অধিকার নিয়ে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ভারত শাসিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর (এর বিভাগসমূহ হলো, কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু এবং লাদাখ), পাকিস্তান শাসিত গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশ এবং চীন শাসিত আকসাই চীন এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট অঞ্চল সমূহ নিয়ে পুরো কাশ্মীর গঠিত।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পাকিস্তান এবং ভারতের মাঝে যে দ্বন্দ্ব তার অন্যতম একটি কারণ হল কাশ্মীর নিয়ে বিভেদ। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত বিভাজিত হলে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ১৯৪৯ সালের ১লা জানুয়ারি উভয়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে। এ যুদ্ধে পাকিস্তান কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ এবং ভারত অবশিষ্টাংশ লাভ করে। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানকে বিভক্ত করা হলেও কাশ্মীরের বিষয়টি ব্রিটিশরা অমীমাংসিত রেখে যায়। ভারতীয় স্বাধীনতা আইনে কাশ্মীরকে ভারত বা পাকিস্তান যে কোন একটিতে যুক্ত হওয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল।
বৃটিশ ভারতে অনেক স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ছিল, যেগুলোকে তাদের নিজস্ব রাজা বা রাণী ব্রিটিশ সরকারকে কর দেয়ার বিনিময়ে শাসন করত। এ রাজ্যগুলোকে (কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ) বলা হত দচৎরহপবষু ঝঃধঃব’। ব্রিটিশ সরকার নিয়ম করে যে,  চৎরহপবষু ঝঃধঃব গুলো তাদের ইচ্ছামত ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে। কাশ্মীর মুসলিম প্রধান রাজ্য ছিল। সঙ্গত কারণেই এটি পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তৎকালীন কাশ্মীরের হিন্দু শাসক মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত নেন। ফলে জনঅসন্তোষ দেখা দেয়। কেননা এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল মুসলমান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় পাকিস্তান সরকারও কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্তিকরণের দাবি জানায়। ফলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীরে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
কাশ্মীর নিয়ে দ্বিতীয়বার ১৯৬৫ সালে যুদ্ধে লিপ্ত হয় রাষ্ট্র দুটি। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্ততায় ঐতিহাসিক তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধবিরতি ঘটে। ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয়বারের মত কারগিল যুদ্ধে জড়ায় পাক-ভারত।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান সীমান্ত সমস্যাঃ
বস্তুত কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে এখনও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে আবার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মাঝে কয়েক দফা হামলা এবং গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে কয়েক দিন পরে দ’ুদেশ ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী দ্বন্দ্ব প্রশমিত করে।

ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্কের সূচনা হয়। দেশদুটির মধ্যে আদিকাল হতেই ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও নৃ-ভাষাতাত্ত্বিক সামঞ্জস্যতা রয়েছে। তাছাড়াও দেশ দুটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র এবং উভয়ই সার্কের সদস্য। তবে দেশদুটির মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বিশেষত সীমান্তের মাধ্যমে আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী, তালেবান সদস্য, শরণার্থী পাকিস্তানে প্রবেশ করায় পাকিস্তান সরকার উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
ডুরান্ড লাইন:
ডুরান্ড লাইন হল পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান বিভাজিত সীমান্ত চিহ্নিত রেখা। ডুরান্ড লাইন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৩ সালে ডুরাল্ড লাইন এগ্রিমেন্ট এর মাধ্যমে। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ইন্ডিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধি মর্টাইমার ডুরান্ড এবং তৎকালীন আফগান শাসক আমীর আবদুর রহমান খান এর মধ্যে। এই চুক্তিতে ৭টি সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ ছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী কেউ কারো অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেনা। ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর উত্তরাধীকারসূত্রে ডুরান্ড লাইন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত চিহ্নিত রেখা হয়। কিন্তু এই লাইন নিয়ে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে এখনো কোন আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি বা তারা এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ চুক্তিকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন করেনি।
আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বে পাস্তু ভাষাভাষি অঞ্চল এবং পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের মধ্যে ডুরান্ড লাইন অবস্থিত। এখানকার পুরো অঞ্চলজুড়ে নৃতাত্ত্বিক পাস্তুন জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এই পাস্তনরা হল আফগানিস্তানের একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা এ অঞ্চলে হাজার হাজার বছর পূর্ব হতে বসবাস করে আসছে।
প্রাচীনকাল হতেই পস্তুন জনগোষ্ঠী এই এলাকাগুলোতে অবাধে চলাচল করত। কিন্তু ব্রিটিশদের সাথে চুক্তি পস্তুন জনগোষ্ঠীর অবাধ চলাচলে কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং তারা দু’এলাকাতেই নির্বিঘেœ চলাচল করত। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর এজন্য আফগান সরকার ডুরান্ড লাইনকে দু’দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনীহা প্রকাশ করে এবং আফগান সরকার ভাবত এই চুক্তি ছিল একটি অকার্যকর চুক্তি। আফগান সরকার এজন্যও উদ্বিগ্ন যে, যদি এই সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করা হয় তাহলে ৫০ মিলিয়ন পস্তুন জনগোষ্ঠী বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং তা আফগানিস্তানের জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার মনে করে এই সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে এবং এই সীমান্ত বিভাজন মেনে না নিলে পস্তুন জনগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে বিদ্রোহ করতে পারে যা পাকিস্তানের জন্য উদ্বিগ্নের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। উল্লেখ্য যে, এই সীমান্তই ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে আফগানিস্তানের বাণিজ্যের বা পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রধানতম পথ।
 ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সরকারের বিরুদ্ধে সমর্থন দিলে দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে সীমান্ত সমস্যার ক্ষেত্রেও কোন সমাধান হয়না। কিন্তু ১৯৮০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালালে আফগানিস্তান থেকে বহু শরণার্থী এই লাইন ব্যবহার করে পাকিস্তানে আসে। এসময় বহু মুজাহিদীন গ্রুপও পাকিস্তানে এসে প্রশিক্ষণ নিয়ে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। পাকিস্তান সরকার এসময় সীমান্ত নিয়ে কোন বিরোধ করেনি। ১৯৯৬ সালের পর তালেবান গোষ্ঠীর সাথে পাকিস্তান সরকারের সখ্যতা গড়ে উঠে। পাকিস্তানের সহায়তায় আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তালেবান শাসককে ডুরান্ড লাইন সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করতে বললে তালেবান সরকার তা অস্বীকার করে এবং তারা যুক্তি উপস্থাপন করে যে, মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোন সীমানা থাকতে পারেনা। এরপর কারজাই সরকার ক্ষমতায় আসলে সেও পূর্বতন সরকারের নীতিকেই বলবৎ রাখে।
আফগানিস্তান সরকার বরাবরই মনে করে পাকিস্তান অবৈধভাবে পস্তুন জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করে আফগান জাতিকে দুর্বল করতে চায়। আফগানিস্তানের দাবি হচ্ছে যেখানেই পস্তুন জনগোষ্ঠীর বাস সেটাই আফগানিস্তানের অংশ। সুতরাং আফগানিস্তানের এই চুক্তি মেনে না নেয়ার অন্যতম কারণ হল তারা পাকিস্তান অধ্যুষিত পস্তুন জনগোষ্ঠী অঞ্চলকে তাদের নিজেদের বলে দাবি করে।
ভারত-নেপাল সীমান্ত সমস্যা ঃ
বর্তমানে এই লাইনটি আফগানিস্তানে ন্যাটোর রসদ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। আফগানিস্তান সরকার দাবি করছে এই লাইনটি ব্যবহার করে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী আফগানিস্তানে এসে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা অস্বীকার করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই লাইনে মাঝে মাঝে ড্রোন হামলা চালিয়ে সন্ত্রাস দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অনেক বেসামরিক লোক মারা যাচ্ছে। ফলে পাকিস্তান সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
                                                                                                                         
ভারত এবং নেপালের মাঝে প্রাচীনকাল হতেই ভৌগলিক, জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৫০ সালে নেপাল এবং ইন্ডিয়ার মাঝে ‘ইন্দো-নেপাল পিস এ্যান্ড ফ্রেন্ডশীপ ট্রিটি’ এর মাধ্যমে দুদেশের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কের সূচনা হয়। তখন থেকে ইন্ডিয়া এবং নেপালের মাঝে স্পেশাল রিলেশন রয়েছে। বর্তমানে নেপাল এবং ইন্ডিয়ার জনগণ কোন পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই সীমান্তের কাছাকাছি স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে পারে এবং দুদেশে কাজ করতে পারে। তারপরও দেশদুটির মধ্যে কিছু দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। মূলত বৃহৎ শক্তির সাথে ক্ষুদ্র শক্তির যে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের স্বরুপ দেখা যায় তা এই দেশ দুটির মাঝে বিদ্যমান।
ইন্ডিয়া-নেপাল সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য জয়েন্ট টেকনিক্যাল লেভেল বাউন্ডারী কমিটি ১৯৮১ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোন সমস্যারই সমাধান করতে পারেনি।
কালাপানি সমস্যাঃ
কালাপানি একটি ভূখন্ডগত বিবাদপূর্ণ এলাকা যেটি নেপালের ডারকুলা জেলা এবং ইন্ডিয়ার পিথরাগোর জেলার মাঝখানে অবস্থিত। কালি নদীর উৎপত্তি কৈলাস শৃঙ্গের মানস্সরোবর এ, যেটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০ মিটার উচুতে অবস্থিত। বলা হয়ে থাকে ঋষি শ্রী বিজয়া এখানে ধ্যানমগ্ন করতেন, এজন্য এটার নাম দেয়া হয়েছে বিজয় উপত্যকা। কিন্তু স্থানীয়ভাবে এটি বাইআনস উপত্যকা নামে পরিচিত। এই সবুজ শ্যামল উপত্যকাটি পাইন, ভোজপত্র এবং চিরসবুজ গাছে আচ্ছাদিত। লিপু-লেক পাস তিব্বতের পাশে অবস্থিত যেটি কালাপানি হতে ১৭ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত।
১৯৬২ সালে চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত যুদ্ধের পর থেকে বর্তমানে কালাপানি অঞ্চলটি ইন্দো-তিব্বতিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের দ্বারা দখলকৃত রয়েছে বলে নেপাল অভিযোগ করে আসছে। নেপাল দাবি করে পশ্চিম কালাপানির সংযুক্ত নদীটিই প্রধান কালি নদী যেটি অদ্যবধি নেপালের অধীনে ছিল। আবার ভারত দাবি করে পূর্ব কালাপানির সংযুক্ত নদীটিই প্রধান কালি নদী যেটি অদ্যবধি ইন্ডিয়ার অধীনে ছিল। এ নদী সীমান্তটি নেপালে মহাকালি এবং ভারতে উত্তরখন্দ নামে পরিচিত। ১৮১৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এবং নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি হয় যেখানে কালি নদীকে ইন্ডিয়া সংলগ্ন দক্ষিণ নেপালের অংশ বলে স্বীকার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই ম্যাপটি ব্রিটিশ জরিপকারীদের দ্বারা অঙ্কিত হয় যেখানে নদীটির সীমানাকে আলাদাভাবে দেখানো হয়। ব্রিটিশদের এই দ্বান্দ্বিক বিভাজনের কারণেই বর্তমানে ভারত ও নেপালের মাঝে কালাপানি নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দেশ দুটি তাদের নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী নদীটির দাবি করে যাচ্ছে।      
চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধঃ



ম্যাকমোহন লাইনঃ
১৯১৪ সালের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ও তিব্বতের মাঝে ম্যাকমোহন লাইন তৈরি হয়। বর্তমানে এটি চীন ও ইন্ডিয়ার সীমানা চিহ্নিত রেখা। এটি ভুটান থেকে ৫৫০ মাইল পশ্চিমে প্রসারিত এবং পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদী হতে ১৬০ মাইল পূর্বে প্রসারিত। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব স্যার হেনরি ম্যাকমোহন এর নামে এই লাইনের নামকরণ করা হয়। এই সীমানা ভারত মেনে নিলেও চীন মেনে নিতে ইচ্ছুক নয়। ২০০৩ সালে তিব্বতের দালাইলামা দাবি করে এই অঞ্চলটি তিব্বতের। চীন সিমলা চুক্তিকে অস্বীকার করে। তারা বলে তিব্বত বাহিরের কোন দেশ নয় বরং এটি চীনের অপরিহার্য অংশ। চায়না যে ম্যাপ প্রনয়ণ করে সেখানে দেখা যায়, তিব্বতের দক্ষিণে ৬৫,০০০ বর্গকি.মি ব্যাপী যে লাইন আছে সেটিই প্রকৃত সীমানা বলে চীন দাবি করে। এই অঞ্চলটি চীন ১৯৬২-৬৩ সালে সিনো-ইন্ডিয়া যুদ্ধে দখল করে। চীন স্বীকার করে নেয় লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলকে যেটি ম্যাকমোহন লাইনেরই অংশ এবং এটি ভারতের পূর্বের সীমান্তের একটি অংশ।
   ঝড়ঁৎপব: ঋবন ৮ঃয ২০১২, ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ ড়হষরহব
ভারত-চীন সম্পর্ক জটিল ও স্পর্শকাতর নানা ইস্যুতে। দক্ষিণ চীন সাগরের তেল বিতর্ক, অরুণাচল প্রদেশ ও লাদাখের কিছু এলাকার উপর  চীনের দাবি ও দুই দেশের সীমানা বরাবর সৈন্য মোতায়েন সহ নানা ইস্যুতে উভয় দেশের মাঝে উত্তেজনা বিদ্যমান। চীনের সাথে ১৪ টি দেশের স্থল ও জলসীমা রয়েছে। ম্যাকমোহন লাইন এর মাধ্যমে যখন ভারত ও চীনের সীমানা রেখা নিরূপন করা হয় তখন থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ভারতের নিয়ন্ত্রনে থাকা দুইটি অঞ্চলকে চীন তার নিজের বলে দাবি করে। প্রথম দাবি হচ্ছে-ভারতের উত্তর-পূর্বের একটি অঞ্চল আকসাই চীন যেটি লাদাখে অবস্থিত এবং দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে অরুণাচল প্রদেশকে নিয়ে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে। ১৯১৪ সালে ভারত, চীন ও তিব্বত এর প্রতিনিধিদের নিয়ে খঅঈ (খরহব ড়ভ অপঃঁধষ ঈড়হঃৎড়ষ) হিসেবে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে পুনরায় চীন-ভারত সামডুরং চ্যু উপত্যকা, যেটি অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত তা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক ১৯৮৮ সাল থেকে অবনতির দিকে যেতে থাকে। ১৯৯৩ সালের ৭ সেপ্টেমবর চীন এবং ভারত চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং উভয়েই সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে একমত হয় ও খঅঈ কে মেনে চলতে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ১৯৯৬ সালে উভয় দেশ পুনরায় ঈইগং (ঈড়হভরফবহপব ইঁরষফরহম গবধংঁৎবং) এ একমত পোষণ করে। এতে বলা হয় খঅঈ এর সীমান্ত বরাবর উভয় দেশের সৈন্যরা পূর্ববর্তী ঘোষণা ছাড়া কোন ধরনের সংঘর্ষে জড়াতে পারবে না এবং সৈন্যদের চলাচলে কোন বাধা প্রদান করা হবে না। ১০ কিলোমিটার অঞ্চলকে নো ফ্লাই জোন করা হয় যুদ্ধ বিমান গুলোর জন্য এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর মানচিত্র বিনিময়ের কথা বলা হয় খঅঈ তে। ১৯৯৭ সালে উভয় দেশই পুনরায় সিবিএম চুক্তিকে নবায়ন করে। উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের পরিদর্শন ব্যতীত এসকল অগ্রগতিকে উভয়ে দেশের জন্য ইতিবাচক বলে ধরা হয়। অতি সম্প্রতি ২৭ এপ্রিল ২০১২ তে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এর একজন প্রতিনিধি (এবহবৎধষ ঋঁ ছঁধসুড়ঁ) ভারত সফরে আসেন। সফরের দুই সপ্তাহ পূর্বে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চীনকে অভিযুক্ত করেন এবং বলেন পাকিস্তানের পারমাণবিক এবং মিসাইল প্রোগ্রামের উন্নয়নের জন্য বিরোধপ্রবণ এলাকা যেটি ভারতে অবস্থিত সেখানে বিমান উড্ডয়নের জন্য চীন হ্যালিপ্যাড তৈরী করছে যেটি সংঘর্ষ এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মে মাসের  ৩ তারিখ তিনি আরো বলেন চীন হলো ভারতের জন্য হুমকির কারণ এবং চীন তিব্বতে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ করছে মায়ানমারের নৌ ঘাঁটিকে সম্প্রসারণ করার জন্য। যার মাধ্যমে মায়ানমারের কোকো দ্বীপপুঞ্জ থেকে ভারতের উপর নজরদারি করা যায়। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফার্নান্দেজ এর মতে চীনের সাম্প্রতিক কার্যক্রম ভারতের জন্য হুমকি স্বরূপ । এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত হলেও বিরোধপূর্ণ সীমান্ত হতে তিনি ভারতীয় সৈন্য অপসারণ করতে রাজি নন। যদিও এটি সিবিএম চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। চীন এবং ভারতের মাঝে এখনও কিছু মৌলিক ইস্যু  এবং সীমান্ত বিরোধ রয়ে গেছে যেটি তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্রমান্বয়ে জটিল করে তুলছে। তিব্বত (জিনজিয়াং), সিকিম এবং কাশ্মীর ইস্যু এত প্রভাব ফেলে। তিব্বত যেটি ১৯৫০সালে চীন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। সিকিম ১৯৭৪ সাল থেকে ভারতের নিয়ন্ত্রনে।
দক্ষিণ চীন সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত-চীন দ্বন্দ্বঃ
ভিয়াতনামের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সমুদ্র এলাকায় ভারতের তেল অনুসন্ধানকে তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে চীন। চীন এর মতে, ভারত এই কাজ বন্ধ না করলে গুরুতর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। তিব্বত এবং তাইওয়ানের পর দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত এলাকায় ভারতের তেল গ্যাস অনুসন্ধান ইস্যুটি চীনের কাছে সমান স্পর্শকাতর বিষয়। ভারত-ভিয়েতনাম দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, ভিয়েতনামের কথিত সমুদ্রসীমার মধ্যে দুটি ব্লকে হাইড্রোকার্বণ অনুসন্ধান থেকে ভারত বিরত না থাকলে তার পরিণাম খারাপ হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে চীন। অন্যদিকে ভারতের বক্তব্য দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনামের সাথে তেল অনুসন্ধান চুক্তি হয়েছে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে। কাজেই ভারতকে সেক্ষেত্রে চীন বাঁধা দিতে পারেনা। কারণ ওই জলসীমা যে চীনের তা প্রতিষ্ঠিত বা স্বীকৃত নয়।
ভারত-চীন মীমাংসার পথে অন্তরায়ঃ
দ্ব ১৯১৪ সালে ম্যাকমোহন লাইনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা হলে চীনের কোন সরকারই তা পরবর্তীতে মেনে নেয়নি।
দ্ব উভয় দেশের জনগণের মাঝে সমাধানের মনোভাব থাকলেও পরোক্ষভাবে ভারত-চীন উভয়ই অস্ত্রের মহড়া বৃদ্ধি করছে।
দ্ব ১৯৬২ সালে চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পর পরবর্তী পাঁচ দশকে সরাসরি কোন যুদ্ধে জড়ায়নি উভয় দেশ। তবে এর পরে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হলেও কোন ফলাফল আসেনি।
দ্ব ভারত নিজের নিরাপত্তার জন্য তিব্বতকে বাফার জোন হিসেবে দেখতে চায়। ভারত তিব্বতের স্বাধীনতার পক্ষে, চীন তিব্বতকে নিজ ভূখন্ডের অংশে পরিণত করে ১৯৫০ সালে। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৯ সালের মার্চে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাইলামা ভারতের অরুণাচল প্রদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে যা ১৯৬২ সালে উভয় দেশের মাঝে সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছিল।
দ্ব ভারতকে বিভাজন করার লক্ষ্যে চীন তার প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানকে সাথে নিয়ে আসামের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে উলফা, তামিল, নাগা ও কাশ্মীরিদের মত বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতিগোষ্ঠীর আকাঙ্খা পূরণে সাহায্য করছে।
দ্ব সর্বশেষ ভারত কর্তৃক অবৈধভাবে দখলকৃত দক্ষিণ তিব্বতের নব্বই হাজার বর্গকিমি এলাকা, যাকে ভারত অরুণাচল প্রদেশ নামে অভিহিত করে। তাই ভারত মনে করে চীন এই ভূখন্ড উদ্ধার করতে পারে।
দ্ব
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জলসীমা নিয়ে সমস্যাঃ
চীন ভারতের ভুল বুঝাবুঝির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উর্বর ক্ষেত্র হল তাদের দীর্ঘ ৪০ হাজার কিমি সীমান্ত। ১৯৬২ সালের চীনা অভিযানের পরেও সীমান্ত রেখার সিংহভাগ অনির্দিষ্ট। উত্তর ভারতের অনির্দিষ্ট সীমানায় ভারত সুইজারল্যান্ডের আয়তনের সমপরিমাণ ভূখন্ড তাদের বলে দাবি করে। এদিকে চীন এই ভূখন্ড তাদের লাদাখের অন্তর্ভূক্ত বলে দখলে রেখেছে। অরুণাচল প্রদেশের সিংহভাগ যা সুইজারল্যান্ডের আয়তনের তিনগুণ যা চীন নিজের বলে দাবি করে। ম্যাকমোহন লাইনের দক্ষিণে তাওয়াং নামক একটি অঞ্চল রয়েছে যেটি ভারত ১৯৫১ সালে দখল করে নেয় যখন চীন তিব্বতে সৈন্য প্রেরণ করে।

বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা তিন প্রতিবেশী দেশ। প্রতিবেশী দুই দেশের সাথেই রয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ। এই সমুদ্রসীমা বিরোধের সূত্রপাত হয় ১৯৭৪ সাল থেকে। পরবর্তী সময়ে ভারত ও মিয়ানমার এমনভাবে সমুদ্রের ওপর তাদের দাবি পেশ করে যাতে বাংলাদেশ একরকম কল্পিত সমুদ্র বেড়া দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রতিবেশি দুইদেশের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ কখনও কখনও জটিল আকার ধারন করে। অতঃপর ১৪ মার্চ ২০১২ জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (ওঞখঙঝ) সমুদ্রসীমা নিরসনে মিয়ানমারের দাবি ‘সমদুরত্ব পদ্ধতি’ ও বাংলাদেশের দাবি ‘ন্যায্যতা পদ্ধতি’ কে বিচার বিশ্লেষণ করে ন্যায্যতা পদ্ধতি (ঊয়ঁরঃধনষব চৎরহপরঢ়ষব) অনুযায়ী রায় ঘোষণা করে। ফলে বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমা দাবিতে জয়ী হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার অমীমাংসিত সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়।
ঋড়ৎঁস: অ সড়হঃযষু গধমধুরহব ড়ভ দঞযব উধরষু ঝঃধৎ’ ঝবঢ়ঃবসনবৎ,২০১১
বাংলাদেশের সার্বভৌম সমুদ্রসীমা টঘঈখঙঝ ওওও এর ৩, ১৫ ধারা অনুযায়ী পশ্চিমে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্য¯্রােত ধরে ভারত ও বাংলাদেশের তটরেখা থেকে সমদুরত্ব ধরে এগুবে। এ রেখা ৩৩ ধারা অনুযায়ী সন্নিহিত অঞ্চলসহ ২৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যাবে, তবে ঝধিঃপয ড়ভ ঘড় এৎড়ঁহফ বা অতল সমুদ্রের খাড়ি পার হয়ে যাবে না। অতল সমুদ্রস্পর্শ করলে এ রেখা ৭৬.৩, ৭৬.৪ ও ৭৬.৫ অনুযায়ী বাঁক নিয়ে দুই দেশের নদীসমূহের বাহিত পলির বিভাজন  রেখা ঝধিঃপয ড়ভ ঘড় এৎড়ঁহফ ধরে এগিয়ে গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাবে।
ভারতও মিয়ানমারের মতই সমদুরত্ব পদ্ধতিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে চায় যেখানে বাংলাদেশ সমতার ভিত্তিতে এই সীমা নির্ধারণ করতে চায়। বঙ্গোপসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম তীর হিসেবে যদি ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমারেখা চিহ্নিত হয় তাহলে বাংলাদেশ অনেকটাই ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্র অঞ্চল দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসা না করেই গভীর সমুদ্র অঞ্চলে তেল গ্যাস অনুসন্ধান এবং আহরণের ক্ষেত্রে ব্লকের নাম ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশও বিতর্কিত অঞ্চলে তেল অনুসন্ধানের ব্যাপারে কনকোফিলিপসের সাথে একটি চুক্তি করে। পরে এ দুটি দেশ তাদের এ ধরনের উদ্যোগ প্রত্যাহারে একমত হয়  এবং উভয় দেশই জাতিসংঘের স্থায়ী সালিশী আদালতের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে মামলা করে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


সীমান্ত সমস্যার সমাধানের উপায়ঃ

দ্ব সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ভারত-পাকিস্তানকে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজনৈতিক এবং সীমান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাতে হবে। আবার পারষ্পরিক নিরাপত্তার স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হলেও তাদের সমঝোতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
দ্ব কাশ্মীর সংক্রান্ত সমস্যাটি সমাধানের জন্য গণভোটের আয়োজন করতে হবে। ব্রিটিশরা প্রিন্সলি স্টেটগুলোর স্বাধীনতার ব্যাপারে যে মতামত দিয়েছিল তা স্বীকার করে নিতে হবে। সর্বোপরী এই অঞ্চলের জনগণের দাবিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
দ্ব সীমান্তে অযাচিত হত্যাকান্ড বন্ধ করতে হবে। বিশেষত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেভাবে বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে তা অতি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে বিবেচনা করা যেতে পারে।
দ্ব সার্কের আলোচনায় যাতে সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সেজন্য সীমান্ত বিবাদ নিষ্পত্তি কমিশন তৈরি করতে হবে। তবে সীমান্ত বিরোধের জের ধরে তা যেন সার্কের অন্যান্য আলোচনার বিষয়ে প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করতে হবে।
দ্ব বর্তমান পৃথিবীতে আঞ্চলিক সংহতির প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। আঞ্চলিক সংহতির মাধ্যমে ইউরোপ এখন পৃথিবীর নিকট অনুসরণীয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও আসিয়ান গঠনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংহতি বৃদ্ধি করেছে। তাই আমাদেরকেও সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংহতি বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে হবে। আর সংহতি গড়ে উঠলেই সীমান্ত সমস্যা আপনাআপনিই থেমে যেতে পারে।
দ্ব সীমান্ত সমস্যার অন্যতম কারণ দেশগুলোর মাঝে পারস্পরিক অবিশ্বাস। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাসের মাত্রা চরমে। তাই এই অবিশ্বাস থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদের আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
দ্ব দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সীমান্ত সমস্যা সমাধান না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হল রাজনীতিবিদদের স্বেচ্ছাচারি মনোভাব। মূলত রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় মানসিকতাই এ অঞ্চলের সীমান্ত সমস্যার অন্যতম কারণ। রাজনীতিবিদদের উচিত এ অঞ্চলের উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দ্ব
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্ত সংকটে বহিঃশক্তির অবস্থানঃ
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্ত সমস্যার অন্যতম কারণ ব্রিটিশদের অযাচিত সীমান্ত বিভাজন। বিভাজনের সময়েই তারা মোটেই মনোযোগী ছিলনা। যার কারণে এখনো এ অঞ্চলে সীমান্ত দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। তাই বিবাদপূর্ণ সীমান্ত এলাকাগুলোকে নিয়ে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাদের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।

এ অঞ্চলের সীমান্ত সংকটে বহিঃশক্তিগুলো অনেকটাই নিষ্ক্রিয় মনোভাব পোষণ করে। বিশেষত সীমান্ত বিবাদ নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে পশ্চিমাদের কোন দৃশ্যমান স্বার্থ না থাকায় তারা এ নীরবতার নীতি গ্রহণ করে। তবে ¯œায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কাশ্মীর সংক্রান্ত ইস্যুটিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছিল। কিন্তু বর্তমান একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই কাশ্মীর ইস্যুটিকে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপার বলে এড়িয়ে যায়। মূলত বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ভারতের প্রতিপত্তি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় তারা নীরবতার নীতি অবলম্বন করে ভারতকে সন্তুষ্ট রাখতে চাইছে। আবার কাশ্মীরের জনগণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় পরাশক্তিগুলো বরাবরই এ বিষয়টিকে এড়িয়ে চলছে। তবে চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত ইস্যুটিতে বিশ্বশক্তিকে মাঝে মাঝে সরব আওয়াজ তুলতে দেখা যায়। আবার পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি স্থানগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র মাঝে মাঝে ড্রোন হামলা চালিয়ে জনজীবণ বিপন্ন করে তুলেছে। তাদের দাবি সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে ড্রোন হামলা জরুরী। কেননা এ স্থানগুলো জঙ্গিদের অভয়াশ্রম বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। কিন্তু এ হামলায় সাধারন নিরাপরাধ মানুষই হতাহত হয় বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের এই ড্রোন হামলায় অন্য শক্তিগুলো নীরব সমর্থন জ্ঞাপন করে।
বাংলাদেশী সীমান্তে বিএসএফ এর হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুধু বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমেই প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে থাকে। আবার পশ্চিমা দেশগুলো শুধুমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ করে। কিন্তু কোন হস্তক্ষেপ করেনা।
সীমান্ত সংকট এবং অস্ত্রীকরণঃ
তবে বিশ্বশক্তিগুলো চায় এ অঞ্চলের সীমান্ত সংকট টিকে থাকুক। আর সীমান্ত সমস্যা টিকে থাকলেই দেশগুলোর মাঝে অস্থিতিশীলতা থেকে যাবে। অস্থিতিশীলতা থাকলে তারা নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করবে। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে ক্রয় করবে উন্নত দেশগুলো থেকে অস্ত্র। ফলে তারা পরোক্ষভাবে লাভবান হবে।

সীমান্ত সমস্যার কারনেই দেশগুলো ক্রমাগত অস্ত্রীকরণের পথ বেছে নিচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রীকরণের প্রতিযোগিতা নজিরবিহীন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ এতটাই বেশি যে, এরা পরস্পরকে মোকাবেলা করার জন্য পারমানবিক অস্ত্র ভান্ডার, যুদ্ধবিমান, মিসাইল এর সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে এ কারণে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পারমাণু অস্ত্রও ব্যবহার হতে পারে। পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার হলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাম্প্রতিককালে ভারতের সাথে পাকিস্তানের লাইন অব কন্ট্রোলে দু’পক্ষের সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটলে ভারত তার জনগণকে পরমাণু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়।
ভারত এ অঞ্চলের পরাশক্তি। আবার ভারতের পাশে আরেক বিশ্বশক্তি হল চীন। ভারত-চীন উভয়ই বর্তমানে তাদের অস্ত্রভান্ডার সমৃদ্ধ করে চলছে। উভয় শক্তির মাঝে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ রয়েছে। এ বিবাদ ভবিষ্যতে আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে। আর দুই পরাশক্তির মাঝে বিবাদ এ অঞ্চলের দেশগুলোকে শুধু পিছিয়েই দিবে। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে অস্ত্রীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের ব্যাপারে অত্যন্ত মনোযোগী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া সফরে আট হাজার কোটি টাকার (১০০ কোটি ডলার) সমরাস্ত্র কিনতে রাশিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে সীমান্তসহ অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বাংলাদেশ এত বিশাল বাজেটের অস্ত্র ক্রয় করতে যাচ্ছে।

হৃ সীমান্তে সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে
হৃ বৈরী সম্পর্কের সৃষ্টি হচ্ছে
হৃ আন্ত:ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে
হৃ সীমান্ত হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে
হৃ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে
হৃ দেশগুলোর মাঝে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ছে
হৃ সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাচ্ছে
হৃ আঞ্চলিক সংহতির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে
হৃ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে
হৃ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সীমান্ত সমস্যার প্রভাবঃ






                                                                       



সীমান্ত সমস্যা যেভাবে আঞ্চলিক সহযোগিতার পথে অন্তরায় এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাবঃ



কাশ্মীর সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ঘৃণার বীজ বোপন করে, তার অর্থনৈতিক মূল্য বিচার করলে দেখা যায় এই সমস্যা দুটি দেশের কোটি কোটি মানুষকে অশিক্ষা আর অনাহারের অভিশাপের মধ্যে রেখেছে। কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে ভারত ও পাকিস্তানের হঠকারি শাসকগোষ্ঠী কাশ্মীরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ক্রমাগত অস্ত্রের উন্নয়ন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন, বিশাল সামরিক বাজেট করেই যাচ্ছে। যে প্রতিযোগিতা বর্তমান পর্যন্ত বিদ্যমান।
সীমান্ত নিয়ে বৈরী সম্পর্ক থাকায় দেশগুলোর বাণিজ্যেও তা প্রভাব ফেলছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ খুবই কম। সার্কের দেশগুলো ২০০৮ সালে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য করেছে ১১০০ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ সার্ক চেম্বারের মতে, এ দেশগুলোর মাঝে প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্য হতে পারে এর চারগুণ অর্থাৎ ৪০০০ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসেবে এই অঞ্চল তার বাণিজ্য সম্ভাবনার শতকরা ৭৩ ভাগই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে সীমান্তসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে।
সীমান্ত সংঘাতে জর্জরিত থাকায় এবং দেশগুলোতে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। দেশগুলোর মাঝে বাণিজ্য ভারসাম্যও বিদ্যমান নেই। এ অঞ্চলের বৃহৎ শক্তি ভারতের সাথে অন্যান্য দেশগুলোর বাণিজ্যিক ঘাটতি অনেক বেশি।


মূল্যায়নঃ



সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাটি পৃথিবীর অনেক দেশেই বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই সমস্যাটি অত্যন্ত প্রকট। বিশেষত ভারতের সাথে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন এবং নেপালের সীমান্ত সমস্যা বিদ্যমান। এর মধ্যে আবার ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত সমস্যাটি আন্তর্জাতিক ইস্যু সৃষ্টিকারী একটি বিষয়। ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশ ছাড়ার আগে সীমানা নিয়ে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি রেখে গেছেন। সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য তারা যাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, মূলত তাদের অজ্ঞতাই এ অঞ্চলের জনগণের জন্য সীমান্ত দুর্ভোগ বয়ে এনেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এমনিতেই বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। দেশগুলোর মাঝে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিমাণ খুবই কম। আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণও উল্লেখ করার মত নয়। দেশগুলোর রাজনীতিবিদদের মাঝে দুর্নীতির প্রবণতা ও দলীয় আনুগত্য বেশি। দলীয় স্বার্থের কারণে তারা মাঝে মাঝে দেশীয় স্বার্থকে বিসর্জন দেয়। তবে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মাঝে পাশ্ববর্তী দেশগুলেকে সামান্য ছাড় দেয়ার মানসিকতাও দেখা যায়না। আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারা একবারেই নীরব।
সহায়ক গ্রন্থাবলীঃ
এ অঞ্চলের দেশগুলো একই প্লাটফর্মে আসতে সীমান্ত সংকট একটি বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। সার্কের এ অঞ্চলে কমন প্লাটফর্ম হওয়ার পথে অন্যতম অন্তরায় হল সীমান্ত বিবাদ। বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত বিবাদের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশে পড়ে। আবার এ অঞ্চলে সীমান্ত সংকটের প্রকৃতি এমন যে, তা রাতারাতি মীমাংসা করাও সম্ভব নয়। যতদিন না এ অঞ্চলের দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ যৌক্তিক সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে ততদিন এ অঞ্চলের সীমান্ত সংকটের সমাধান হবে বলে প্রতীয়মান হয়না। তাই এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে আঞ্চলিক সংহতি না গড়ে উঠার পেছনে প্রধান কারণ হবে সীমান্ত সংকট।


  • বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১), ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
  •  আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং বিশ্বরাজনীতি, মোরশেদ সফিউল হাসান।
  • া  চধশরংঃধহ জবষধঃরড়হ ডরঃয ওহফরধ: ইবুড়হফ কধংযসরৎ, অ ৎবঢ়ড়ৎঃ নু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈৎরংরং মৎড়ঁঢ়.
  • া  ঈড়হভষরপঃ, ঈৎরংরং ধহফ ঘঁপষবধৎ ঝঃধনরষরঃু রহ ঝড়ঁঃয অংরধ; অ ধৎঃরপষব নু তধভধৎ ওয়নধষ ঈযববসধ.
  • া  চড়ষরঃরপং ধহফ ড়ৎরমরহ ড়ভ ঃযব ওহফরধ-ইধহমষধফবংয ইড়ৎফবৎ ঋবহপব, জরুধিহধ ঝযধসংযধফ.
  • া  ওংষধসরংঃ গরষরঃধহপু রহ ঃযব চধশরংঃধহ-অভমধহরংঃধহ ইড়ৎফবৎ জবমরড়হ ধহফ ট.ঝ. চড়ষরপু, ক. অষধহ কৎড়হংঃধফঃ ্ কবহহবঃয কধঃুসধহ.

2 মন্তব্য(গুলি):

  1. রাহুল বলেছেন...

    টিকা
    কাং-ইউ-ওয়েই

    ৩ নভেম্বর, ২০১৭ এ ১০:১৬ AM  

  2. রাহুল বলেছেন...

    চিয়াং সরকারের গঠন বর্ণনা করুন।

    ৩ নভেম্বর, ২০১৭ এ ১০:১৮ AM  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন